বেঁচে থাকার গান

আমাদের আজকালকার প্রজন্ম, আমরা যারা জন্ম থেকে বড় হয়েছি মোটামুটি স্বচ্ছলতার মধ্যে, আমরা যারা যখন যেটা খেতে চেয়েছি - আমাদের বাবা-মা দুইদিন পরে হোক কিংবা দশদিন পরে হোক, সেটা আমাদের যোগাড় করে দিয়েছেন, আমরা যারা ছোটবেলা থেকে শুধু সাফল্য আর ভালো রেজাল্টের পিছনে ছুটতে শিখেছি, মিনিটে মিনিটে ক্রাশ খেতে শিখেছি, বলতে পারেন - আমরা আসলে জীবনের কতটুকু দেখেছি ??
আমরা কখনো বিশ্বযুদ্ধের মর্মান্তিকতা দেখি নি, যখন লক্ষ লক্ষ মানুষের একটা জনপদ একটা সামান্য বোমার আঘাতে নিমেষে হয়ে গেছে কঙ্কালস্তূপ। দেখি নি তেতাল্লিশের মন্বন্তর, যখন দুমুঠো খাবারের জন্য মানুষ কাক আর শকুনের সাথে প্রতিযোগিতা করেছে। দেখি নি মানুষ কিভাবে জীবনের জন্য, শুধু একটু বেঁচে থাকার জন্য নিজের সবকিছু দিয়ে লড়াই করেছে। আমরা একাত্তরের কথা শুনেছি, কিন্তু একাত্তরে মানুষের যেকোন মূল্যে বাঁচার আকুতি হৃদয়ে অনুভব করি নি।
আমরা জীবনকে সাফল্যের স্কেল দিয়ে মাপতে শিখেছি, ব্যর্থতার স্বাদ পেলে “এ জীবন রেখে কি লাভ” বলতে শিখেছি, কিন্তু, আমরা বুঝতে শিখি নি - আমাদের জীবন রেখে আমাদের লাভ না থাকতে পারে, কিন্তু, যে মানুষগুলো নিজেদের জীবনের চাইতেও আমাদের বেশি ভালোবাসে - তাদের অনেক অনেক লাভ আছে। জীবনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দগুলোকে আমরা মূল্য দিতে শিখি নি, অথচ কথায় কথায় হতাশ হতে শিখেছি।
বেঁচে থাকতে ভালো লাগে না ?? একবার ওই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখুন যারা হাসপাতালের বেডে শুয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে শুধু কয়েকটা দিন বেশি বাঁচার জন্য। জীবনে ভালোবাসার অভাব ?? ভালোবেসে রাস্তার এতিম পথশিশুদেরকে কোলে তুলে নিন, দেখবেন ওদের হাসিমুখগুলোর দিকে তাকিয়ে আপনি জীবনের সব দুঃখ ভুলে যেতে পারবেন।
একটা কথা মনে রাখবেন, যতদিন পর্যন্ত আপনার মৃত্যুতে পৃথিবীর একটা মানুষের চোখ দিয়ে অন্তত এক ফোঁটা অশ্রু ঝরবে, ততদিন পর্যন্ত আপনার নিজের জীবন নেয়ার অধিকারও আপনার নেই, কোনভাবেই নেই।